
নুসরাত ফারিয়া গ্রেফতার, শিল্পী সমাজ থেকে প্রতিবাদের ঝড়
গত ১৮ মে, থাইল্যান্ড যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে ইমিগ্রেশন পুলিশ প্রথমে আটক করে ও পরে গ্রেফতার দেখায়। জানা গেছে, ভাটারা থানায় করা একটি মিথ্যা মামলায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। মামলাটি করা হয়েছিল জুলাই মাসের গণ-আন্দোলনের সময়, যেখানে তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুসছেন দেশের শিল্পীসমাজ। তারা ইউনূস সরকারের কঠোর সমালোচনা করে দেশে বাক স্বাধীনতায় হস্থক্ষেপ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।
উল্লেখ্য যে মামলায় নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আন্দোলনের পুরো সময়জুড়েই নুসরাত ফারিয়া দেশের বাইরে ছিলেন। দেশবাসী ও শিল্পী সমাজের ধারণা, ‘মুজিব’ সিনেমায় শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করাই তার বিরুদ্ধে এই হয়রানিমূলক পদক্ষেপের কারণ।
এই ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু সদস্য ফারিয়ার পক্ষে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
শিল্পী ও নির্মাতাদের প্রতিক্রিয়া
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন এই গ্রেফতারকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করে বলেন, “যারা ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে জনগণের ওপর অত্যাচার চালিয়েছে, ফারিয়ার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একটি অগ্রহণযোগ্য ঘটনা।”
নায়িকা পরীমণি লেখেন, “কথা হচ্ছে, কোনোকালেই কথা বলতে পারবা না মনু। ঘুমাও ঘুমাও। ঘুমই উত্তম।”
মাহিয়া মাহি ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, “কী লজ্জা! তিনি একজন শিল্পী!”
নায়ক বাপ্পী চৌধুরী লেখেন, “আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি অপরাধে জড়িত হন, নিয়মমাফিক বিচার হোক। তবে শুধুমাত্র কোনও চরিত্রে অভিনয়ের কারণে এই হয়রানি দুঃখজনক।”
অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ লেখেন, “রাষ্ট্র কি ভুলে গেছে যে এই দেশ বাকস্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল? শিল্পী যেন নিজের মতো করে শিল্পচর্চা করতে পারে, সেটাই তো স্বাভাবিক।”
নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ!”
নির্মাতা শিহাব শাহীন এই গ্রেফতারকে ‘হয়রানিমূলক ও অবিশ্বাস্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সাংবাদিক ও গীতিকার ইশতিয়াক আহমেদ লেখেন, “নুসরাত ফারিয়া এই দেশের সবচেয়ে স্মার্ট অভিনেত্রীদের একজন। তার পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে তাকে নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে—গান, কোরিওগ্রাফি, গাড়ি কেনা থেকে শুরু করে চরিত্র নির্বাচন পর্যন্ত। অথচ হত্যাচেষ্টার মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ হাস্যকর।”
অভিনেতা খায়রুল বাশার বলেন, “উনি একজন অভিনেত্রী, রাজনীতিক না। সিনেমায় অভিনয়কে যদি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে তা অন্যায়। সরকারের আয়োজনে শিল্পীরা অংশ নিলে পরবর্তী সময়ে যদি তার জন্য শাস্তি পেতে হয়, তবে রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ কোথায়?”
অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষা লিখেছেন, “ক্ষমতা, অবস্থান, দুর্নীতি… সবই একটি চক্রের অংশ।”
নির্মাতা আফজাল হোসেন মুন্না লিখেছেন, “আন্দোলনের সময় যিনি বিদেশে ছিলেন, তাকেই ৯ মাস পর গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে! এটা কি ধরনের বিচার?”