Wednesday 04 June, 2025

শুল্কায়ন স্থবির, বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে চট্টগ্রাম বন্দর

মুক্তমঞ্চ ডেস্ক

প্রকাশিত: 15:12, 2 June 2025

শুল্কায়ন স্থবির, বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে চট্টগ্রাম বন্দর

শুল্কায়ন স্থবির, বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্কায়ন কার্যক্রম প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার রেশ কাটতে না কাটতেই আসছে ঈদুল আযহার ১০ দিনের ছুটি। এর ফলে কাস্টমস ও ব্যাংক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, যা পণ্য খালাসে বড় বাধা তৈরি করবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বন্দরে শুল্কায়ন স্থবির হয়ে পড়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির প্রতিবাদে গত ১৪ই মে থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালন করেন। একই সময়ে বন্দরের শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে বন্দর কার্যক্রমেও জট তৈরি হয়। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে ঈদের টানা ছুটি, যা মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বহুমাত্রিক আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা।

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খালাস না হলে ড্যামারেজ ফি বহুগুণ বেড়ে গেছে। বর্তমানে ২০ ফুট কন্টেইনারের জন্য প্রথম ৭ দিনের জন্য প্রতিদিন ২৪ ডলার, পরবর্তী ১৩ দিনে ৪৮ ডলার এবং তৃতীয় স্তরে প্রতিদিন ৯৬ ডলার পর্যন্ত দিতে হচ্ছে, যা আগে অনেক কম ছিল। এতে দেশের শিল্পখাতে বিরাট প্রভাব পড়েছে।

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, কাঁচামাল বন্দরে আটকে পড়ায় উৎপাদন থমকে আছে। প্রিমিয়ার সিমেন্ট, বিএসআরএম, প্যাসিফিক জিনস ও এশিয়ান-ডাফ গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান নেতারা জানিয়েছেন, পণ্য ছাড়ে বিলম্বের ফলে উৎপাদন সীমিত বা বন্ধ রাখতে হচ্ছে, যা রপ্তানি আদেশ বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত- যা দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে। এ খাতে মাসিক রপ্তানি আয় প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি অ্যাকসেসরিজ দেরিতে এলেও পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।

বন্দরে কন্টেইনার জমে যাওয়ার ফলে সেখানকার ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এমএসসি বাংলাদেশসহ শিপিং কোম্পানিগুলোর মতে, এভাবে কন্টেইনার জমে থাকলে জাহাজ অপারেশনের দক্ষতা হ্রাস পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে।

এদিকে, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই), বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতারা বলছেন, কেবল বন্দর চালু থাকলেই হবে না, কাস্টমস, ব্যাংক এবং বন্ড অফিসও খোলা রাখা জরুরি। না হলে ছুটির পরে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।

ঈদের দীর্ঘ ছুটি ও পূর্ববর্তী কর্মবিরতির ফলে প্রতিদিন অন্তত ৪০ লাখ ডলারের ক্ষতি হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দৃশ্যমান ক্ষতির বাইরেও আছে শ্রম, বিদ্যুৎ ও স্টোরেজ খরচের মতো অদৃশ্য খাত, যেগুলো ক্ষতির পরিমাণকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।