
জবির সাবেক অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারা বেগম জেলহাজতে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মুক্তিযোদ্ধা এস এম আনোয়ারা বেগমকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গত বছর ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা এই মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে জেলে রাখার আবেদন করেছিলেন সুত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এ কে এম মাহমুদুল কবির।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান বুধবার এই আদেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে জানান, প্রাথমিক তদন্তে আনোয়ারা বেগমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং তাকে জামিন দিলে তিনি পলাতক হতে পারেন। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হেফাজতে রাখা প্রয়োজন।
অন্যদিকে, আনোয়ারা বেগমের আইনজীবী সোহরাব হোসেন সোহেল তার বয়স ও মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় তুলে ধরে জামিনের আবেদন করেন। তিনি বলেন, “তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এই ঘটনায় জড়িত নন, বরং তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। মানবিক কারণে তাকে জামিন দেওয়া উচিত।” উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গতকাল বিকেলে জাবি ক্যাম্পাসের সামনে থেকে আনোয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষার্থীরা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মামলাটি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (জেসিডি) জাবি শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার হত্যাচেষ্টার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত। গত বছর ১৯ জুলাই স্টার হোটেলের কাছে গণঅভ্যুত্থানের সময় সুজন মোল্লার চোখে গুলি লাগে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সুজন মোল্লা ঢাকার একটি আদালতে ১৯২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, যার মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, জাবির শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ৯৪ জন ছাত্রলীগের কর্মী। শুনানির পর ম্যাজিস্ট্রেট সুত্রাপুর থানাকে মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন। পুলিশ ২৫ ফেব্রুয়ারি এটিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।
আনোয়ারা বেগম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ও তার বোন মনোয়ারা অল্প বয়সে পটুয়াখালী থেকে পালিয়ে সুন্দরবনে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ।
বুধবার দাপ্তরিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা মব সৃষ্টি করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ তাকে হত্যাচেষ্টার এই মামলায় গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।