
রাজশাহীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখল, পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন
রাজশাহী নগরীর চন্ডিপুর এলাকায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একদল সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। শুধু বাড়ি দখল নয়, হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার (২৮ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহীর বরেন্দ্র প্রেসক্লাবের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আব্দুস সামাদ-এর ছেলে শাহাজাদা সামাদ সুমন (৪৪)।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, চন্ডিপুর প্রেসক্লাবের পেছনে অবস্থিত তাদের পৈতৃক বসতভিটায় হঠাৎ করে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে পরিবারের সবাইকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং এরপর বাড়ির দখল নেয়।
তিনি বলেন, “আমার বাবা একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অথচ আজ আমরা তার সন্তান হয়েও নিজ ঘরে থাকতে পারছি না। সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়ির মালামাল লুটপাট করেছে। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সামাদ বলেন, ২০১০ সালে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন কর্তৃক হোঃ নং-২২০, তফশীল- জেলা রাজশাহী, থানা-রাজপাড়া, মৌজা- চন্ডিপুর, জে.এল-৬, আরএস খতিয়ান নং-২৬, আরএস দাগ নং- ৫০৬ এর তিনতলা বিল্ডিং টেন্ডারের মাধ্যমে প্রাপ্ত হই। বাড়িটি পৈতৃক সুত্রে আমাদের বাড়ি হলেও হাউজ বিল্ডিং লোনে বাড়িটি নিলাম করা হয়। টেন্ডারে বাড়িটি পায় মিসকি আলম। পরে তার নিকট থেকে নগদ অর্থে কিনে নেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, রাজপাড়া থানার চন্ডিপুর এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মিসকি আলম ও একই এলাকার মাইনুদ্দিনসহ অজ্ঞাত ৩৫/৪০ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী নিয়ে ২৭শে মে সকাল ৯টায় আমার বাড়িতে হামলা করে। জিনিসপত্র লুটপাট করে পরিবারের সদস্যদের মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় রাজপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শাহাজাদা সামাদ বলেন, মিসকি আলম উক্ত তফশীলভুক্ত সম্পত্তি টেন্ডারে প্রাপ্ত হয়ে ৩০% টাকা বাবদ ৭ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২৭শে জুন রাসিক ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে এক সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিসকি আলম আমার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা বুঝে নিয়ে তার টেন্ডারে প্রাপ্ত তফশীল সম্পত্তি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে আমার কাছে হস্তান্তর করে। ঐ সম্পত্তির বাকি ৭০% অর্থাৎ ২০ লক্ষ ২৪ হাজার ২৭ টাকা আমি হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দিলেও তারা আমাকে বাড়ির রেজিস্ট্রি দিতে অস্বীকার করে।
তখন আমি কোন উপায় না পেয়ে মিসকি আলমের বিরুদ্ধে রাজশাহী কোর্টে একটি দেওয়ানি মামলা করি (মামলা-২৩/২০১৯)। বর্তমানে মামলাটি চলমান। সন্ত্রাসীদের হামলার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। আমি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উক্ত সন্ত্রাসীদের প্রাণনাশের হুমকিসহ নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শনে ভীতসন্ত্রস্ত ও নিরুপায় হয়ে আজকের এ সংবাদ সম্মেলন করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।