
লাগামহীন ব্যয়ে বাড়ছে ঋণ, রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যর্থ ইউনুস সরকার
ইউনূস সরকারের সময়ে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে এবং বাড়তি ব্যয় মেটাতে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে ক্ষমতারোহন করা ড. ইউনূসের সরকারের কাছ থেকে ব্যয় সংযমের প্রত্যাশা ছিল জনমনে। কিন্তু তা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং সরকারি ব্যয় বাড়ছেই। ফলে ঋণের বোঝাও বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পরিচালন ব্যয় আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২৬ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যয় কমানোর সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছিল। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ২ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। জুলাই থেকে মার্চ মেয়াদে পরিচালন ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ৭১ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৪৮.৪৬ শতাংশ।
গত আগস্টের পর থেকে বাজেট বাস্তবায়নের গতি ধীর হয়ে গেছে। বছরের শেষ তিন মাসে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, বিশেষত জুন মাসে যা স্বচ্ছতা ও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, বাজেটে সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ব্যয় বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। অর্থ বিভাগ একাই খরচ করেছে ৬৯ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। সুদ পরিশোধ চলতি বছর ২৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশ অভ্যন্তরীণ ঋণের বিপরীতে।
শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ১১.৬৪% বেড়ে ব্যয় ৩৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকায় পৌছেছে। কৃষি খাতে ১৫.২৫% বৃদ্ধি পেয়ে ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। প্রতিরক্ষা ও আইন-শৃঙ্খলা খাতে যথাক্রমে ১৫% ও ৮.৭৩% হারে বেড়ে ব্যয় হয়েছে ২১ হাজার ২৬১ কোটি এবং ১৮ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও গৃহায়ণ খাতেও ব্যয় বেড়েছে ৬% থেকে ১০% পর্যন্ত। এভাবে ইউনূস সরকার ব্যয় বাড়িয়েছে প্রতিটি খাতে।
এদিকে, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা, অথচ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা পূরণে সরকারকে ৮০ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিতে হয়েছে।
ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ড. সাজ্জাদ জহিরের মতে, মূল্যস্ফীতি ও পদোন্নতি-ভিত্তিক বাড়তি ব্যয়ও খরচ বৃদ্ধির কারণ।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, ব্যয় কমানোর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার তা কাজে লাগায়নি।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ইউনূস সরকার চাইলেই একটি ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারত, কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। বরং আগের ব্যয় কাঠামোই অনুসরণ করা হয়েছে।
সরকারি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও রাজস্ব আহরণে তেমন অগ্রগতি নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনকে সামনে রেখে খরচ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের যে আশা ছিল স্বচ্ছতা ও ব্যয়সংযমের মাধ্যমে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ওপর চাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।