Wednesday 21 May, 2025

দেশে বাড়ছে বেকারত্ব, সংস্কারে উদাসীন সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:54, 19 May 2025

দেশে বাড়ছে বেকারত্ব, সংস্কারে উদাসীন সরকার

দেশে বাড়ছে বেকারত্ব, সংস্কারে উদাসীন সরকার

বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমন এক সময়ে যখন অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক সংস্কার ও তাৎক্ষণিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উপেক্ষা করে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে ‘মানবিক করিডর’ এবং দেশের প্রধান বন্দর সহ দেশের সম্পদ বিদেশি বন্ধুদের কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩.৯৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৩০ হাজার, যা গত বছরের তুলনায় সোয়া ৩ লাখ বেশি।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯তম আইসিএলএস (ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিস্টিশিয়ানস) মানদণ্ডে বেকারত্বের হার ৪.৬৩ শতাংশ, যেখানে ১৩তম আইসিএলএস মানদণ্ডে এই হার ৩.৬৯ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে ১৩তম আইসিএলএস অনুযায়ী বেকারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার, যা এখন বেড়ে ২৬ লাখ ১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত অগ্রাধিকার নিয়ে সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংস্কার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিবর্তে সরকার ‘মানবিক করিডর’ এবং দেশের প্রধান বন্দরগুলো বিদেশি বন্ধুদের কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার পরিকল্পনায় মনোনিবেশ করছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বন্দর ব্যবস্থাপনায় অটোমেশনের প্রবর্তন লাখ লাখ শ্রমিকের চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই পদক্ষেপ দেশের শ্রমবাজারে আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে, যেখানে ইতোমধ্যে বেকারত্ব একটি জ্বলন্ত সমস্যা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার বিদেশীদের সুবিধাদি দিতে এসেছেন, দেশের বেকারদের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ ছাড়া আর কোন ভিশনই নেই।

বিবিএসের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেকার হিসেবে বিবেচিত হন তারাই, যারা গত সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কাজ করেননি, তবে কাজের জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন। ১৯তম আইসিএলএস মানদণ্ডে শুধুমাত্র বেতন বা মুনাফার বিনিময়ে কাজকে কর্মসংস্থান হিসেবে গণ্য করা হয়, যেখানে ১৩তম আইসিএলএস-এ পরিবারের ভোগের জন্য উৎপাদনমূলক কাজও কর্মসংস্থানের আওতায় পড়ে। এই পার্থক্যের কারণে বেকারত্বের হিসাবে ভিন্নতা দেখা যায়।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, সরকারের বর্তমান নীতি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শ্রমবাজারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বেকারত্বের ক্রমবর্ধমান হার মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ এবং কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন, যা বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে পারে। তবে সরকারের বিদেশকেন্দ্রিক নীতি এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার প্রতি উদাসীনতা জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।