Thursday 29 May, 2025

রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা, ৫ বছরে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 21:12, 26 May 2025

রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা, ৫ বছরে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি

রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা, ৫ বছরে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়েছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠনের প্রস্তাব ঘিরে সৃষ্টি হওয়া প্রশাসনিক অস্থিরতা এবং কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির প্রভাবে রাজস্ব সংগ্রহে লক্ষণীয় ভাটা দেখা দিয়েছে।

এনবিআরের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩.২৪ শতাংশ। অথচ কোভিডকালীন ২০১৯-২০ অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি ছিল ১.৯৬ শতাংশ। সাম্প্রতিককালে এটি রাজস্ব প্রবৃদ্ধির অন্যতম সর্বনিম্ন হার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা সংশোধন করে নামিয়ে আনা হয় ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটিতে। তবে এপ্রিল শেষে রাজস্ব আদায় দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায়, যার ফলে লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা।

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “মে ও জুন হলো রাজস্ব সংগ্রহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তবে চলমান অচলাবস্থার কারণে মে মাসে ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।”

১২ দিনব্যাপী কলমবিরতির কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর, প্রধান কাস্টম হাউজ এবং দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে কার্যত শুল্কায়ন বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ৪২ হাজার কনটেইনার জমে গেছে এবং খালাসের জায়গার সংকটের কারণে ১৮টি জাহাজ ভাসমান অবস্থায় অপেক্ষমাণ। এর ফলে তৈরি পোশাক এবং ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আটকে পড়েছে, যা রফতানিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

বেনাপোল, তামাবিলসহ স্থলবন্দরগুলোতেও অনুরূপ পরিস্থিতি। ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে আটকে আছে ৫৫০ ট্রাক, এবং তামাবিলে পাথর ও চুনাপাথর পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, “ঈদের আগে কাঁচামাল না এলে উৎপাদন এবং রফতানি সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এর প্রভাব শুধু গার্মেন্টস খাতে নয়, সার্বিক অর্থনীতিতে পড়বে।”

নীতিনির্ধারক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, “রাজস্ব প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত মাত্রায় না পৌঁছালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে ঋণচুক্তির বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে এবং ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত কমে যাওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হবে।”

স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট: লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ৪২২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ২০২ কোটি। প্রবৃদ্ধি ৫.৭৯%।

আমদানি-রফতানি শুল্ক: লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, আদায় মাত্র ৮১ হাজার ১১৬ কোটি। প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক, -১.৩৬%।

শুধু এপ্রিল মাসে: লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। ঘাটতি ৫ হাজার ৮১০ কোটি।

আগামী ২ জুন উপদেষ্টা পরিষদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে যাচ্ছে। তার ঠিক আগেই রাজস্ব সংগ্রহে এমন ধাক্কা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজস্ব ঘাটতি অব্যাহত থাকলে উন্নয়ন প্রকল্প এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে।