
সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফ-এর ইউনিফর্ম তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামে
চট্টগ্রাম নগরীতে একটি পোশাক কারখানা থেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর জন্য তৈরি ২০ হাজারের বেশি ইউনিফর্ম জব্দ করেছে পুলিশ। তবে ঘটনাটির গভীরে রয়েছে দেশের ভেতরকার শক্তি দ্বন্দ্ব ও ‘ডিপ স্টেট’ নেটওয়ার্কের কার্যক্রম নিয়ে নতুন প্রশ্ন।
নগর পুলিশের একটি গোপন অভিযানে গত ১৭ই মে রাতে চট্টগ্রামের নয়াহাটে অবস্থিত ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ কারখানা থেকে এসব ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলামসহ আরও দুইজনকে, যারা এই ইউনিফর্ম তৈরির ‘অর্ডার’ এনেছিলেন।
পুলিশ জানায়, এই ইউনিফর্ম সরবরাহের নির্দেশ এসেছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ-এর এক সদস্য মংহ্লাসিন মারমা ওরফে ‘মং’-এর কাছ থেকে। প্রায় দুই কোটি টাকার বিনিময়ে এই কাজ হয়েছিল বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
যদিও ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে এক সপ্তাহ পর, তবে এখন নিশ্চিত হওয়া গেছে—এই গোটা অভিযান নগর পুলিশ নয়, সেনা গোয়েন্দাদের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছিল।
একাধিক সূত্র জানায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাথে দ্বন্দ্বের পর সাম্প্রতিক সময়ে ইউনূসপন্থী গোষ্ঠীর কার্যক্রমের ওপর সেনা গোয়েন্দারা নজরদারি বৃদ্ধি পায়। এই পোশাক সরবরাহ ছিল সেই ইউনূস-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর ‘অভ্যন্তরীণ নির্দেশনার’ অংশ, যা ডিপ স্টেটের কিছু প্রবীণ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী মাধ্যমে সংগঠিত হচ্ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, “কেএনএফ শুধু পাহাড়ে নয়, ঢাকাসহ শহরাঞ্চলেও সরবরাহ নেটওয়ার্ক গড়ার চেষ্টা করছে। তারা এখন অর্থ, অস্ত্র, পোশাক—সবই পেশাদারভাবে জোগাড় করতে চায়।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদ নয়, রাজনৈতিকভাবে অস্থিরতা তৈরি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করার উচ্চপর্যায়ের একটি খেলা চলছে।”
সূত্র জানায়, অপারেশন শেষ হওয়ার পর প্রথমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একাধিক কর্মকর্তা ঘটনাটি ‘সাইলেন্ট’ রাখতে বলেন। সেনা গোয়েন্দাদের অনুরোধে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চললেও, পরে তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সিএমপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্রিফিং করেনি। তবে একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন— “তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে এটি সাধারণ নিরাপত্তা ইস্যু নয়।”
বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় সক্রিয় কেএনএফ গত এক বছরে একাধিক বার সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধে হামলায় জড়িয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা, এবং জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সঙ্গে যৌথ ট্রেনিং ক্যাম্প পরিচালনার অভিযোগ আছে।
সম্প্রতি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হলেও, নতুনভাবে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ও লজিস্টিক সক্ষমতা গড়ে তুলছে তারা। আর এবার তারা সরাসরি চট্টগ্রামের মতো বাণিজ্যিক শহরকে তাদের ‘সাপ্লাই চেইনের’ অংশ বানানোর চেষ্টা করেছিল।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, এই ঘটনার পেছনে থাকা ইউনূস ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীর ‘নিরাপত্তা উপদেষ্টা’ বলয়ে থাকা কিছু ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দেশের ভেতর একটি সমান্তরাল কাঠামো চালানোর চেষ্টা করেছে। তবে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাপ্রধানের সাথে নতুন তৈরি হওয়া নেতৃত্বের দ্বন্ধের কারণে এই ধারা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।