Thursday 22 May, 2025

পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তন: ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধার

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:28, 21 May 2025

পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তন: ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধার

পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা পরিবর্তন: ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই পাঠ্যপুস্তকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা’ পরিবর্তন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এই পরিবর্তনের বিষয়টি জামুকার সদস্যদের ক্ষুব্ধ করেছে। তারা অভিযোগ তুলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জামুকার সাম্প্রতিক ৯৬তম সভায় এই ইস্যুতে তীব্র প্রতিক্রিয়া উঠে আসে। বৈঠকে জানানো হয়, পাঠ্যপুস্তকে নতুন করে সংজ্ঞা নির্ধারণের সময় “মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম”সহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কিছু রাজনৈতিক দলের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে বা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। এমন প্রস্তাবে জামুকার অধিকাংশ সদস্য একমত পোষণ করেননি। বরং তারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাদের নাম ইতিহাসে থাকবে—সেটাই সত্য এবং গ্রহণযোগ্য।”

সভায় জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নতুনভাবে একটি সংজ্ঞা যুক্ত করেছে যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার উল্লেখ না করে বলা হয়েছে—

“মুক্তিযুদ্ধ অর্থ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে মার্চ হইতে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের সহযোগী মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং তদীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।”

এর আগে বিদ্যমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বঙ্গবন্ধুর নাম এবং “মুজাহিদ বাহিনী, পিস কমিটি” ইত্যাদির নামও ছিল। নতুন প্রস্তাবে সেগুলো বাদ পড়ে।

ছাড়াও বৈঠকে জানানো হয়, প্রস্তাবিত ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং আগামী উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এই অধ্যাদেশে ‘তৎকালীন’ শব্দ সংযুক্ত করার সুপারিশসহ অন্যান্য সংশোধনী যুক্ত করা হতে পারে।

জামুকা সদস্যদের প্রতিক্রিয়া

বিডি ডাইজেস্ট-এর সঙ্গে কথা বললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জামুকা সদস্য বলেন,

“আমাদের না জানিয়ে পাঠ্যপুস্তকে সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে—এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এ ধরনের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছি। এখন সরকার কীভাবে এগোয়, সেটাই দেখার বিষয়।”

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ দেশের অস্তিত্বের মূলভিত্তি। সেই ইতিহাস সংরক্ষণে ও উপস্থাপনে দায়িত্বশীল আচরণ না হলে বিভ্রান্তি ও বিকৃতির আশঙ্কা থেকেই যায়। মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক, রাজনৈতিক দলগুলোর নাম রাখা বা বাদ দেওয়ার মতো বিষয়গুলো যেন কোনোভাবেই ইতিহাসের সত্যতা ও জাতির স্মৃতিকে আঘাত না করে—এটাই মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক ও সচেতন নাগরিকদের প্রত্যাশা।