Thursday 29 May, 2025

চলতি অর্থবছরে কর্মহীন হয়েছেন ২১ লাখ মানুষ, যার ১৮ লাখই নারী!

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 22:18, 27 May 2025

চলতি অর্থবছরে কর্মহীন হয়েছেন ২১ লাখ মানুষ, যার ১৮ লাখই নারী!

চলতি অর্থবছরে কর্মহীন হয়েছেন ২১ লাখ মানুষ, যার ১৮ লাখই নারী!

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) সারাদেশে প্রায় ২১ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ১৮ লাখই নারী। অর্থাৎ মোট চাকরি হারানো মানুষের প্রায় ৮৫ শতাংশই নারী।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘জেন্ডারভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে আসে।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। আয়োজক ছিল ‘এসডিজি বিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ’। সহযোগিতা করে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে কম— মাত্র ১৯ শতাংশ নারী বর্তমানে শ্রমশক্তির অংশ। যদিও আয় বা সম্পদের ওপর নারী ও পুরুষের প্রভাব তুলনামূলকভাবে সমান মনে হতে পারে, ব্যয় সংকোচের সময় নারীরাই প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত হন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক বছর আগেও প্রতি মাসে প্রায় ৯ হাজার নারী বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যেতেন, কিন্তু গত দুই-তিন বছরে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে সাড়ে ৪ হাজারের নিচে।

শুধু তাই নয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও নারীদের অগ্রগতি স্থবির হয়ে পড়েছে, কিছু ক্ষেত্রে আবার আগের অর্জনও হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, জেন্ডারভিত্তিক বৈষম্য দূর করে নারীর পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমরা চাই জেন্ডার ইস্যু প্রথমের দিকে থাকুক। গত দেড় দশকে আমরা অনেকখানি এগিয়েছি। সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে ন্যূনতম কিছু প্রয়োগ যদি আমরা না দেখি তাহলে আমরা কিন্তু কষ্ট পাব। এটা শুধু নারীর বিষয় না, এটা বাংলাদেশের জাতীয় বিষয়। এটা উন্নয়নের বিষয় শুধু না, এটা ন্যায্যতারও বিষয়।”

তিনি আরও বলেন, “সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর তথ্য সরকারের কাছে থাকা উচিত। জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়নে বড় বাধা তথ্যের অসংগতি বা সামষ্টিক ডাটা। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও তাদের শ্রমবাজার সম্পর্কে বিচ্ছিন্নভাবে তথ্য থাকার কারণে বাজেটেও এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশের নারীদের জন্য বাজেট পর্যাপ্ত নয়। যেটুকু দেয়া হয় সেখানেও কাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা থাকে।”

জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেনের প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং সূচনা বক্তব্যে বলেন, “এসডিজি ৫ (জেন্ডার সমতা) অর্জন করতে নতুন ধরনের অর্থায়নের পদ্ধতি ও সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি নারীদের বরাদ্দে যে ঘাটতি রয়েছে, তা দূর করতে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেন দূতাবাসের ডেভেলপমেন্ট কো-অর্ডিনেশন প্রোগ্রাম পরিচালক মারিয়া স্ট্রিডসম্যান। আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপসচিব তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ফেরদৌসি সুলতানা এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সেক্রেটারি রেখা সাহা।

রেখা সাহা বলেন, “লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের জন্য চাহিদা ও অর্থায়নের মধ্যে দূরত্ব রয়ে গেছে। বাজেটে নারীদের জন্য বৃহত্তর প্রতিনিধিত্ব ও কোটা সংরক্ষণ অপরিহার্য।”

যদিও কোটা বাতিলের দাবি নিয়েই জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় গতবছর। সেখানে নারীরাই ছিলেন অগ্রগামী, তারা নারী কোটাও বাতিল চেয়েছিলেন। সব কোটা তুলে দেওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে সরকার পরিবর্তন করা হয়। অতঃপর আন্দোলনকারীদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে এখন সকল চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে। অর্থাৎ ভিন্ন নামে ফিরে এলো কোটা। যদিও ১৮ লাখ চাকরি হারানো নারীর তথ্য-উপাত্ত দেখাচ্ছে ভিন্ন এক চিত্র।