
করিডোর ইস্যুর মধ্যে দিয়ে মিয়ানমার থেকে রাষ্ট্রদূতকে অপসারণ
রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনের প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে চলমান বিতর্কের মধ্যে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনোয়ার হোসেনকে ‘অনতিবিলম্বে’ দায়িত্ব ত্যাগ করে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক অফিস আদেশে রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেনকে চলতি সপ্তাহে ঢাকা ফিরে আসার জন্য বলেছে। ঢাকা-নেইপিডোর নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মিয়ানমার থেকে রাষ্ট্রদূতকে ঢাকায় ফেরানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও।
মনোয়ার হোসেন ২০২৩ সালের আগস্টে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান। বিসিএস ২০ ব্যাচে প্রথম স্থান অধিকার করা মনোয়ারকে প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে মিয়ানমারে অ্যাসাইন করা হয়। তিনি সাবেক রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খানের স্থলাভিষিক্ত হন।
গত ২৭ এপ্রিল রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে সরকারের নীতিগত সম্মতির তথ্য প্রকাশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এরপর শুরু হয় করিডর বিতর্ক। প্রায় মাসখানেক কেটে গেলেও এখনো বিতর্ক থামেনি। চলছে সমালোচনা। এ ইস্যুতে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে ছেড়ে কথা বলছে না। বরং ক্রমাগত চাপ তৈরি করছে। বিষয়টি এতটাই সমালোচনার জন্ম দিয়েছে যে, সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে ‘বিশেষ’ ব্রিফ পর্যন্ত করে অবস্থান স্পষ্ট করতে হয়েছে। তবে আলোচনা এখনো থামেনি।
করিডর ছাড়াও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। এটি প্রকাশ্যে আসায় সরকারকে তার জন্য মাশুলও দিতে হয়েছে। এ নিয়ে জেনারেল মিন অং হ্লায়িংয়ের সরকার ঢাকায় কূটনৈতিক পত্র দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এ ছাড়া, গত এপ্রিলে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় খলিলুর রহমান জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী উ-থান শোয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনের প্রসঙ্গ আসে। যদিও মিয়ানমার আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা থেকে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করার কথা বলেছে। পরে নতুন করে লাখের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবরে ‘প্রত্যাবাসন’ নিয়ে উল্টো সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার।
এর আগে, চলতি মাসের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের ইয়াংগুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিরক্ষা শাখায় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আফতাব হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয় সরকার।
গত ১৩ মে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, মিয়ানমারের ইয়াংগুনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিরক্ষা শাখায় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আফতাব হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে দায়িত্ব হস্তান্তরপূর্বক প্রতিস্থাপক ব্যতিরেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের আদেশ দেওয়া হলো।