
যুদ্ধবিরতি আপাতত মেনে নিলেও কঠোর সতর্কবার্তা ভারতের
পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, যেকোনো উসকানির জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখার বার্তা দিয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী।
১০ই মে, শনিবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় নৌবাহিনীর কমোডর রঘু আর. নায়ার বলেন, “আজ যে সমঝোতা হয়েছে, ভারত তা মেনে চলবে। তবে ভুলে যাবেন না — ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। কোনো ধরনের উসকানি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “পাহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার পরেও আমরা দায়িত্বশীল ও সংযত আচরণ করেছি। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রচারিত অনেক ভ্রান্ত তথ্যের বিপরীতে, ভারতের পদক্ষেপ ছিল পরিমিত ও বিবেচনাপ্রসূত।”
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কোরেশি পাকিস্তানের একাধিক দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন।
তিনি বলেন, “পাকিস্তান যে বলছে, তাদের JF-17 যুদ্ধবিমান ভারতের S-400 আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে ক্ষতি করেছে — এই দাবিগুলো পুরোপুরি মিথ্যা। তাছাড়া ভারতীয় বাহিনী ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে বলেও যে অভিযোগ তারা করছে, সেটিও ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ভারতের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আমরা পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোর ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছি এবং ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষার বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভূমিকা সিং জানান, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক আক্রমণাত্মক তৎপরতার জবাবে ভারত সীমিত ও লক্ষ্যভিত্তিক অভিযানের মাধ্যমে কেবল জঙ্গি হামলার লঞ্চপ্যাড ও ভারত-বিরোধী অবকাঠামোগুলোকে টার্গেট করেছে।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ক্ষতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এটা তারা আর বহন করতে পারছে না।” দু’দেশের মধ্যে নতুন এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বিকেল ৫টা থেকে। ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেলস অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়।
তিনি জানান, পাকিস্তানের তরফ থেকেই আলোচনার সূচনা হয়। এরপরই উভয় পক্ষ নিজ নিজ বাহিনীকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর রাখার নির্দেশ দেয়।
১২ই মে দুপুরে ডিজিএমও পর্যায়ে আবারো আলোচনা হবে বলে জানা গেছে, যা ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক সংলাপের ইঙ্গিত বহন করে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই সামরিক উত্তেজনা প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে, যা অঞ্চলটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা।